মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার::
জাতি হিসেবে বাঙালির আনন্দ-উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বইমেলা। রাজধানীতে এই মেলা এখন চলছে সগৌরবে, সমহিমায়। ঐতিহ্যবাহী বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রান্তর এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান বইপ্রেমী হাজারো মানুষের পদচারণায় এখন মুখর হয়ে থাকছে প্রতিদিন। এই অবস্থা চলবে সারা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে।
মেলায় প্রতি বছরের মত এবারও প্রতিদিন যথারীতি এখানে আছে নবীন-প্রবীণ কবি সাহিত্যিক প্রাবন্ধিক-তথা জ্ঞানী-গুণী-পন্ডিত এবং লেখিয়েদের ধুন্ধুমার আড্ডা। সুখের বিষয়, প্রতি বছরই মেলায় পুরনো কবি-লেখকদের সঙ্গে সঙ্গে নতুন লেখিয়েদের নতুন বা প্রথম গ্রন্থের উপস্থিতি বাড়ছে। এটা বড়ই আনন্দের সংবাদ। আর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য তো সুখকর বটেই।
তাই প্রচলিত নিয়মেই বিগত অন্যান্য বারের মত এবারও মেলায় এসেছে অনেক নতুন কবি-লেখকের বিভিন্ন ধরণের উপন্যাস নাটক কবিতা ও গল্পের বই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্মুক্ত আকাশে এইসব নতুন সংযোজন অবশ্যই অপ্রত্যাশিত সমৃদ্ধি বয়ে আনবে তা আর বলবার নয়।
তেমনি নতুন লেখকদের সারিতে এবার সংযোজন ঘটেছে আরও একজন তরুণ কবির। নাম ‘বিপ্লব রেজা’। এই তরুণ, নবীণ কবি চলনে বলনে স্বভাবে বাহ্যত কিছুটা ধীরস্থির হলেও ভেতরে তিনি বেশ চঞ্চল। প্রতি মুহূর্তে তার মননে নীরবে কাজ করে কবিতার ছত্র। এভাবে মনে মনে ভেজে ভেজে কয়েক মিনিটে তিনি রচনা করে ফেলেন একেকটি রোমান্টিক কবিতার লাইন।
আর সময় পেলেই তা লিপিবদ্ধ করে রাখেন কোনও চিরকুটে, কম্পিউটারে অথবা ফেসবুকের ওয়ালে। এভাবেই একসময় দেখা যায় সৃষ্টি হয়ে গেছে বিপ্লব রেজা’র নতুন কবিতা। অর্থাৎ হাঁটা চলার সঙ্গেই তার কবিতার বসবাস। অসম্ভব তারুণ্যদীপ্ত এই নবীণ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বন্ধু তোমার হাতটি বাড়াও’ এবার মেলায় এসেছে। অনেকে হাতে তুলে নেড়ে-চেড়ে দেখছেন। কেউবা এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন দু’একটি কবিতায়। আবার কেউ এক কপি কিনছেন এই তরুণ কবির কাব্য-প্রতিভা যাচাই করবার জন্য।
অক্ষরবৃত্তে লেখা এই গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা মূলত প্রেমজ। প্রেমকে ঘিরেই কবি ‘বিপ্লব রেজা’র কবিতায় পাঁক খেয়েছে নর-নারীর নানাবিধ মনো-দৈহিক মিথস্ক্রিয়া- যা এক নতুন কাব্যগ্রন্থ রূপে প্রকাশিত হয়েছে এবারের বইমেলায়। কবিতাপ্রেমী যেকোনও পাঠক একবার এই বই হাতে নিলে নিমিষে শেষ না করে ছাড়তে পারবেন না বলে আমার বিশ্বস।
যেমন ধরা যাক- কবি তার প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে ‘বন্ধু তোমার হাতটি বাড়াও’ কবিতায় লিখেছেন, “তোমার পরশ কোমল ছোঁয়া, তোমার নিবিড় ভালবাসা, চাই যে মনে চাই যে প্রাণে, দাও গো আমায় – করি আশা”। আবার কবি ‘লাল টিপ’ কবিতায় লিখছেন,“ কপালে গাঢ় লাল টিপ, যেন সন্ধ্যা প্রদীপ”। অন্যত্র ভেতরের আকাঙ্খা প্রকাশ ঘটাতে কবি বলছেন, “ইচ্ছে করে তোমায় নিয়ে উড়াই ঘুড়ি অসীম নীলে, ইচ্ছে করে তোমায় নিয়ে সাঁতার কাটি নদীর জলে।”
পক্ষান্তরে ক্ষুব্ধ, রুষ্ট কবি প্রেমিকাকে সরাসরি আঘাত দিয়ে বলছেন,“ ‘ভালোবাসা’ শব্দটিও তোমার জন্য নয় একটিবার আজ, কারণ তোমাকে কেবল ঘৃণা করা যায়, ভালোবাসা যায় না।”… এমনি আরও অসংখ্য কবিতায় কবি তার প্রেম ও দ্রোহের প্রকাশ ঘটিয়েছেন নানান উপমায় এবং ভিন্ন আঙ্গিকে, অনন্য ভঙ্গিমায়।
প্রখ্যাত আঁকিয়ে ধ্রুব এষ তাঁর পাকা হাতের মুন্সীয়ানায় সাজিয়েছেন ‘বন্ধু তোমার হাতটি বাড়াও’ বইটির অনন্য সুন্দর প্রচ্ছদ। জনপ্রিয় এই শিল্পীর সুকোমল হাতের ছোঁয়া যেন বইটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। অবশ্য সবসময়ের মতই ধ্রুবর হৃদয়কাড়া কারুকার্যের আবরণে অন্যধারা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি যেন আপনা-আপনি পেয়ে গেছে নতুন মাত্রা।
তাই আর বলে দিতে হয় না যে, এই গ্রন্থের লেখক-কবি একজন প্রেমিক পুরুষ। প্রেম দ্রোহ সুন্দর- এই তিনে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে কবি ‘বিপ্লব রেজা’র অস্তিত্বে। প্রেমে নারী, অন্যায়ে দ্রোহ আর প্রকৃতিতে সুন্দর- এসবই ‘বিপ্লব রেজা’র কব্যের প্রধান উপজীব্য। অর্থাৎ অন্তর্গত বৃহত্তর অর্থে পার্থিব যা কিছু সুন্দর, যা কিছু মহান তার সবটাই এই তরুণ কবির কবিতার বিষয়বস্তু।
তাই, কর্মে নতুন হলেও বোধে তাকে খাটো করে দেখবার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। আশাকরি, গ্রন্থটি কবিতাপ্রেমী পাঠকের হৃদয়ের ক্ষুধা সামান্য হলেও মেটাতে সক্ষম হবে।
আশি পৃষ্ঠার এই বইতে স্থান পেয়েছে সত্তরটি কবিতা। এর বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র এক শ’ পঞ্চাশ টাকা। আর গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে বাংলা একাডেমির বইমেলার ১৯৭ ও ১৯৮ নম্বর স্টলে। সুখপাঠ্য এই কাব্যগ্রন্থ এবং কবি বিপ্লব রেজা’র সাফল্য কামনা করছি…।